টেকনাফে জঙ্গি সালাউলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করার কথা অস্বীকার করেছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। তিনি দাবি করেছেন, ওই বৈঠক চলাকালে তিনি উখিয়ায় ছিলেন, তবে জঙ্গিরা বৈঠক করছে এমন খবর পেয়ে সেখানে তিনি ছুটে আসেন এবং তার উপস্থিতিতে বিজিবি সদস্যরা ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে এক বিদেশি নাগরিকসহ চার জঙ্গিকে আটক করে।শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা জানান তিনি।ওইদিন দুপুরে টেকনাফের একটি বাড়িতে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে নিষিদ্ধ মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-র সাবেক কমান্ডার ও পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি হাফেজ সালাউল ইসলামসহ কয়েকজনের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। টেকনাফ এলাকার আরও কয়েকজন জন প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে ওই জঙ্গিসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে তিনি বৈঠক করছিলেন এমন দাবি করেছে বিজিবি।
এ অভিযান শেষে টেকনাফ-২ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক আবু রাসেল ছিদ্দিকী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, জঙ্গিদের গোপন বৈঠকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিসহ ওই এলাকার আরও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি উপস্থিতি ছিলেন। তবে তাদের অভিযানের খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যান।
কক্সবাজারের টেকনাফে গোপন বৈঠককালে আরএসও’রসাবেক কমান্ডার হাফেজ সালাউল ইসলাম ও সৌদি নাগরিকসহ ৪ জনকে আটকের ঘটনায় বিজিবি’র দেওয়া বক্তব্য নাকচ করেছেন সাংসদ আব্দুর রহমান বদি।
এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে বিজিবি’র আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেছেন, ‘সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া এলাকা থেকে একজন দলীয় নেতা আমাকে ফোন করে বলেন যে ওই এলাকার সৈয়দ করিমের বাড়িতে জঙ্গিদের বৈঠক চলছে আপনি একটু দেখে যান। তখন আমি ছিলাম আমার নির্বাচনি এলাকা উখিয়ার ইনানীতে। এই খবর পেয়ে আমি দ্রুত গিয়ে দেখি যে ওই বাড়িটি টেকনাফ উপজেলার সহকারী (ভূমি) কমিশনার জাহেদ ইকবালের নেতৃত্বে বিজিবি’র সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। এসময় বিজিবি’র সদস্যদের নিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে বিদেশিসহ ৪জনকে আটকে সহযোগিতা করি।’
তিনি আরও বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার নির্বাচনি এলাকায় প্রতিদিন জঙ্গিবিরোধী সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছি। সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে বৈঠকের প্রশ্নই আসে না।’
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা বিজিবি’র ওই কর্মকর্তা অভিযানে উপস্থিত ছিলেন না বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর গ্রামে জঙ্গিদের গোপন বৈঠককালে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নেতা কক্সবাজার জেলার দক্ষিণ মহুরি পাড়ার মৃত হাফেজ জিয়াউর হকের ছেলে হাফেজ সালাউল ইসলাম, বাড়ির মালিক মাওলানা সৈয়দ করিম, সৌদি নাগরিক আবু সালে আহমেদ আল গাম্বী ও ঢাকার বাসিন্দা মৌলভী মো. ইব্রাহীমকে আটক করে। তারা এখনও টেকনাফ-২ বিজিবি’র হেফাজতে রয়েছেন।
টেকনাফ থানার ওসি নিশ্চিত আব্দুল মজিদ করেছেন, তাদের এখনও থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, জঙ্গি নেতা আরএসও’রসাবেক কমান্ডার হাফেজ সালাউল ইসলামের কক্সবাজার ও টেকনাফের সরকারি দলীয় সংসদ সদস্য এবং বিএনপি ও ইসলামী ঐক্যজোট নেতাদের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রয়েছে। গত ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর সালাউলের উত্থান শুরু হয়। কক্সবাজারের লিংক রোডে দক্ষিণ মুহুরীপাড়ায় সরকারি বন বিভাগের সাত একর ও স্থানীয় মানুষের তিন একরসহ ১০ একর জায়গা দখল করে সেখানে ইমাম মুসলিম (রহ.) ইসলামিক সেন্টার গড়ে তুলেছেন তিনি। কার্যত এখান থেকেই আরএসওর সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
পাঠকের মতামত